সব পুরুষ একরকম নন। তবে সমাজে এমন এক শ্রেণির পুরুষ আছেন, যারা বাইরের জগতে হয়ে ওঠেন ভদ্রতার প্রতিমূর্তি-সহকর্মীদের কাছে “দারুণ মানুষ”, আত্মীয়স্বজনের কাছে “অসাধারণ স্বভাবের”। অথচ ঘরে পা রাখলেই সেই মানুষটার ব্যবহারে ধরা পড়ে এক নির্মম রূপান্তর।
বাইরে যিনি ভেজা বিড়াল, ঘরে তিনি যেন হিংস্র রয়েল বেঙ্গল টাইগার। অফিসের মানিয়ে চলা, বসের চাপ, জীবনের অপ্রাপ্তি আর হতাশার পুরো দায় যেন এসে পড়ে স্ত্রী নামক ‘নিঃশব্দ যোদ্ধা’র ওপর। সামান্য দেরি, সামান্য ভুল বা প্রশ্ন তুললেই শুরু হয় চেঁচামেচি, অপমান বা অবজ্ঞা।

এই নারী শুধু স্ত্রী নন-তিনি একজন মা, শিক্ষিকা, ঘরের পরিচালক। দিনের শুরু থেকে রাত অবধি সংসারের প্রতিটি দিক সামলাতে সামলাতে তিনি ভুলে যান নিজের নামটাও। অথচ তার চাওয়া খুবই সামান্য-একটু বোঝা, একটু কোমলতা, একটুখানি সম্মান।
এই অদৃশ্য সহিংসতার প্রভাব শুধু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে সীমাবদ্ধ থাকে না, নীরবে বিষ ছড়িয়ে পড়ে সন্তানদের মনোজগতে। সন্তানেরা দেখতে দেখতে বুঝে নেয়-ভালোবাসা মানেই রাগ, পরিবার মানেই চিৎকার আর অভিযোগ।
এই চক্র যদি না থামে, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বড় হবে এক ভঙ্গুর মানসিকতা নিয়ে। এক্ষেত্রে, স্বামীর যেমন দায়িত্ব রয়েছে সহনশীলতা আর বোঝাপড়ার, স্ত্রীরও তেমনি প্রয়োজন স্বামীর ক্লান্তি ও অভিমানকে বোঝার।
বিশেষজ্ঞদের মত:
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, পরিবার টিকে থাকে বোঝাপড়া, সম্মান আর ভালোবাসার উপর ভিত্তি করে। একতরফা মানিয়ে নেওয়া সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত বিষিয়ে তোলে সবাইকে।
একজন স্বামী যেন মনে রাখেন—তিনি শুধুই উপার্জনকারী নন, তিনি একজন শিশু গড়ার কারিগর। আর একজন স্ত্রী যেন বুঝে নেন—তিনি শুধু গৃহিণী নন, একটি প্রজন্মের মানসিক ভিত্তি তৈরি তার হাতেই।
ঘরের বাতাস বদলাতে প্রয়োজন শুধু কিছু বোঝাপড়া, একটু সহানুভূতি আর একজন আরেকজনের পাশে থাকার সদিচ্ছা। ভালোবাসা ও সম্মানের ভারসাম্যেই গড়ে ওঠে এক শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ।