বাংলাদেশে | নিজস্ব প্রতিবেদন:
স্বাদে ও গন্ধে অনন্য। দেখলেই জিভে জল আসে। ভোজন রসিকদের কাছে খুলনার চুকনগরের আব্বাস হোটেল যেন এক ঠিকানা। দেশজুড়ে খ্যাতি পাওয়া এই হোটেলের মূল আকর্ষণ হচ্ছে চুইঝাল, রসুন ও মসলায় রান্না করা দেশি খাসির মাংস। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতার ভিড় উপচে পড়ে এখানে। শুধু খুলনার মানুষই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুরু করে বিদেশ থেকেও অনেকেই আসেন এই অনন্য স্বাদ উপভোগ করতে।
রন্ধনশালার ভেতরের দৃশ্য
সরেজমিনে দেখা গেছে, রান্নাঘরের পাশে সাজানো বস্তায় রসুন, পেয়াজ, শুকনা মরিচ আর ঝাঁক বেঁধে রাখা চুইঝাল। কয়েকজন নারী সারাক্ষণ ব্যস্ত মসলা তৈরি আর সবজি কাটার কাজে। ভেতরে বড় কড়াইয়ে মাটির চুলায় কাঠ পুড়িয়ে খাসির মাংস ভুনা হচ্ছে চুইঝাল ও মসলার মিশ্রণে। ভেসে আসছে ঝাঁঝালো গন্ধ আর সুগন্ধি মসলার সুবাস।
ঐতিহ্যের শুরু ষাটের দশকে
ষাটের দশকে চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ধারে আব্বাস হোসেন প্রথম এই হোটেলের সূচনা করেন। তিন প্রজন্ম ধরে চলছে এই ব্যবসা। বর্তমানে চুকনগর ছাড়াও সোনাডাঙ্গা ও জিরোপয়েন্টে আব্বাস হোটেলের তিনটি শাখা রয়েছে। শুধু চুকনগর শাখাতেই প্রতিদিন প্রায় ২৫ কেজি চুইঝাল আর ৫০-৫৫ কেজি খাসির মাংস রান্না হয়।

জনপ্রিয়তার রহস্য
আলী আকবর, প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস হোসেনের নাতি, জানান :
“আমাদের হোটেলের একটাই আইটেম – খাসির মাংস। বিশেষত্ব হলো চুইঝাল আর রসুন দিয়ে ভুনা করে রান্না করা। স্বাদে এই খাবারের কোনো তুলনা হয় না। দাদার শুরু করা এই হোটেলের সুনামই আমাদের আসল সম্পদ।”
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন হাট থেকে খাসি কিনে আনা হয় এবং হোটেলের পরিবারের সদস্যরাই রান্না করেন। বাইরের কোনো বাবুর্চির হাত নেই, এ কারণেই মান এত বছর ধরে একইভাবে অটুট রয়েছে।

দাম ও পরিবেশন
এখানে প্রতিপিচ মাংস বিক্রি হয় ২১০ টাকায়। এক প্লেট ভাত ২৫ টাকা, সঙ্গে ডাল ফ্রি। সব মিলিয়ে মাত্র ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় একজন ভোজন রসিক তৃপ্তির সাথে খেতে পারেন চুইঝালের খাসির মাংস।
নায়ক-নায়িকা থেকে শুরু করে খেলোয়াড়, রাজনীতিবিদ- সকল শ্রেণির মানুষই এসেছেন এই মাংসের স্বাদ নিতে। খুলনায় এসে আব্বাস হোটেলের চুইঝালের খাসির মাংস না খেলে ভ্রমণ যেন অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
আলী আকবরের কথায়:
“ব্যবসা নয়, সুনামটাই আমাদের কাছে আসল। খাবারের মান ধরে রাখা আর মানুষকে তৃপ্ত করা – এটাই আব্বাস হোটেলের লক্ষ্য।”
খুলনার মাটির স্বাদে ভরপুর আব্বাস হোটেলের চুইঝালের খাসির মাংস আজ খুলনার গণ্ডি পেরিয়ে দেশজুড়ে রন্ধনপ্রেমীদের কাছে কিংবদন্তি হয়ে উঠেছে।
Image © Bong Insider