বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন আবারও উঠে এসেছেন আলোচনার কেন্দ্রে। কারণ, সম্প্রতি তিনি এক প্রকাশ্য ফেসবুক পোস্টে নিজের জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জানালেন, কীভাবে খোলামেলা পোশাক পরার কারণে তাঁকে বারবার সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। অভিনেত্রী স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, একজন নারী কী পরবেন, কীভাবে বাঁচবেন – তা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, সমাজের নয়।
বাঁধনের প্রতিবাদ: “ভালো মেয়ে” হওয়ার চাপে আমি হাঁপিয়ে উঠেছিলাম
আজমেরী হক বাঁধন লেখেন, “আমার জীবনের একটা দীর্ঘ সময় কেটেছে ‘ভালো মেয়ে’ হবার চেষ্টায়। সেই চেষ্টা করতে গিয়ে আমার নিজের অস্তিত্বটাই হারিয়ে ফেলেছিলাম। আর এখন যখন আমি নিজের মতো করে বাঁচছি, তখনও অনেকে আমাকে শিখিয়ে দিতে আসে, কীভাবে পোশাক পরতে হবে, কীভাবে কথা বলতে হবে, কীভাবে আচরণ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমার কাঁধ ঢাকা দিতে বলা হয়েছিল, পোশাক ঠিক করুন—এমন লেকচার শুনেছি বারবার। আমার শরীর, আমার পোশাক, আমার পছন্দ—এটা বুঝতে এত অসুবিধা কেন?”
বাংলাদেশের পোশাকনীতি নিয়েও মুখ খোলেন বাঁধন
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বিতর্কিত ‘ড্রেস কোড’ নির্দেশিকা জারি করে, যেখানে নারী কর্মীদের স্লিভলেস ড্রেস, লেগিংস, শর্ট ড্রেস নিষিদ্ধ করা হয়। এই ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হয়। বাঁধন সেই ইস্যুতেই নিজের মতামত প্রকাশ করে বলেন, “আমরা কি নিজের শরীর ও স্বাধীনতা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রাখি না? পোশাক দিয়ে কারো চরিত্র মাপা বন্ধ হোক।”
বাঁধনের মতে, সমাজ এখনও নারীর শরীর ও পোশাক নিয়ে তীব্র সংবেদনশীল, কিন্তু সেটা গঠনমূলক নয়। বরং তা লজ্জা, হীনমন্যতা এবং অপমানের দিকে ঠেলে দেয়। তিনি বলেন, “আমার শরীর নিয়ে আপনার মন্তব্যের দরকার নেই। যদি কিছু বলতে চান, বলুন আমার কাজ নিয়ে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমি একজন মা, একজন অভিনেত্রী, একজন নারী—এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে আমি একজন স্বাধীন মানুষ। কী পরব, কী বলব, কেমন থাকব—সেটা আমি ঠিক করব।”
বাঁধনের পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর বহু নেটিজেন তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন। নারীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের নিজেরাও কতটা এই ধরণের ‘পোশাক পুলিশিং’-এর শিকার হন, তা জানাতে থাকেন। অনেকেই বাঁধনের এই প্রতিবাদকে নারী স্বাধীনতার গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
একজন মন্তব্য করেন, “আপনার কথা সাহস জোগায়। ধন্যবাদ আপনি মুখ খুলেছেন।”
আরেকজন লেখেন, “আপনাকে দেখে আজ আমরা নিজের মতো পোশাক পরতে সাহস পাই।”
আজমেরী হক বাঁধনের এই প্রতিবাদ কেবল একটি তারকার আত্মজীবনভিত্তিক অভিজ্ঞতা নয়, এটি পুরো সমাজের মানসিকতার বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী বার্তা। একজন নারী কী পরবেন, কী বলবেন, কীভাবে বাঁচবেন—তা একান্তই তাঁর নিজের বিষয়। সমাজের দায়িত্ব হওয়া উচিত, তাঁকে সম্মান ও স্বাধীনতা দেওয়ার।
এই সময়টাতে যখন নারীদের কণ্ঠস্বর চেপে ধরার নানা প্রয়াস চলছে, বাঁধনের মত স্পষ্ট ও নির্ভীক কণ্ঠ খুবই প্রাসঙ্গিক এবং অনুপ্রেরণাদায়ক।