বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ ও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের নাম চুকনগর গণহত্যা। ১৯৭১ সালের এই দিনে, খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে পাকিস্তানি সেনারা হাজারো নিরীহ শরণার্থীর ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে। ইতিহাসবিদদের মতে, এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন সবচেয়ে বড় গণহত্যার একটি।
ঘটনার সূচনা
১৯৭১ সালের মার্চ থেকে পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে পাকিস্তানি সেনাদের দমন-পীড়নের মুখে হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজারো মানুষ সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে আশ্রয় নিতে রওনা দেন। ভারতগামী এই শরণার্থীদের জন্য খুলনার চুকনগর ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট ক্যাম্প। কিন্তু ২০ মে সকালেই পাকিস্তানি সেনারা ট্রাক ও জিপগাড়িতে করে চুকনগরে প্রবেশ করে এবং হঠাৎ ব্রাশফায়ার শুরু করে।
চার ঘণ্টার হত্যাযজ্ঞ
সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকে গুলিবর্ষণ। আতঙ্কিত মানুষ নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করলেও অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে অথবা ডুবে মারা যান। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, ভদ্রা নদী সেদিন রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল।
নিহতের সংখ্যা
বিভিন্ন সূত্রে বলা হয়, এ হত্যাযজ্ঞে প্রায় ১০,০০০ থেকে ১২,০০০ মানুষ নিহত হন। এটি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন একদিনে সংঘটিত সবচেয়ে বড় গণহত্যাগুলির মধ্যে একটি। তবে কিছু গবেষক এই পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
স্মরণ ও শ্রদ্ধা
চুকনগরের সেই ভয়াল দিন আজও স্থানীয় মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে অমোচনীয়। নিহতদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। প্রতি বছর ২০ মে এই গণহত্যা দিবস পালন করা হয়, তবে আন্তর্জাতিক পরিসরে এখনও যথাযথভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

চুকনগর গণহত্যা কেবল একটি আঞ্চলিক ঘটনার ইতিহাস নয়; এটি বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে শরণার্থী জনগোষ্ঠীর বেদনাদায়ক আত্মত্যাগ ও পাকিস্তানি সেনাদের অমানবিকতার জ্বলন্ত প্রমাণ। ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা মনে করেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এ অধ্যায়কে তুলে ধরা জরুরি, যাতে পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো জাতি এমন নির্মমতার শিকার না হয়।
তথ্যসূত্র : Wikipedia
ছবি ও ভিডিও (C) : Bong Insider