সেলুলার জেলের প্রেক্ষাপট
আন্দামানের সেলুলার জেল, যাকে ব্রিটিশরা কুখ্যাত “কালাপানি” বলত, নির্মিত হয়েছিল রাজনৈতিক বন্দিদের শাস্তি ও মানসিকভাবে ভেঙে ফেলার জন্য।
এখানে প্রতিটি বন্দিকে একক সেলে রাখা হতো-যাতে একে অপরের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না থাকে।
পাঞ্জাব, মহারাষ্ট্র, বাংলা—সব প্রদেশের স্বাধীনতাকামীদের পাশাপাশি বাঙালি বিপ্লবীরা এখানে সংখ্যায় অনেক ছিলেন।
বাঙালি বিপ্লবীদের আগমন
বিপ্লবী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকার জন্য বহু বাঙালি যুবক সশস্ত্র বিপ্লবের অপরাধে ধরা পড়েন এবং দণ্ডিত হয়ে কালাপানিতে পাঠানো হয়।
প্রধান নামগুলির মধ্যে:
- বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত, দীনেশ গুপ্ত (অ্যালবার্ট হল আক্রমণ মামলার বীর)
- ব্রজগোপাল দত্ত, বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি, বারীন্দ্রকুমার ঘোষ
- উল্লাসকর দত্ত, হেমচন্দ্র দাস
- ত্রৈলক্যনাথ চক্রবর্তী প্রমুখ।

সেলুলার জেলে বন্দী থাকা ৫৮৫ জন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে ৩৯৮ জনই ছিলেন এই বাংলার তাদের মধ্যে কিছু বিপ্লবীর নাম।
দৈনন্দিন জীবনের সংগ্রাম
- শারীরিক পরিশ্রম – ঘণ্টার পর ঘণ্টা নারকেল তেল কল ঘোরানো, দড়ি পাকানো, কোদাল দিয়ে মাটি কাটা।
- খাবারের অবস্থা – নুনহীন ডাল, পাথর মেশানো চাল, মাঝে মাঝে পচা শাকসবজি।
- শাস্তি – সামান্য অপরাধে কোড়া মারা, শিকল পরানো, অন্ধকার সেলে বন্দিত্ব।
- মানসিক চাপ – পরিবার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা; চিঠি আসত বছরে একবার, তাও সেন্সরের ছুরিকাঘাত করা ভাষায়।
প্রতিবাদ ও আন্দোলন
বাঙালি বন্দিরা কেবল শাস্তি সহ্য করেননি, বরং প্রতিবাদ করেছেন—
- ১৯৩৩ সালের অনশন আন্দোলন – খাদ্য ও আচরণের উন্নতির দাবিতে বহু বন্দি অনশন করেন, তাতে মৃত্যু হয় বিপ্লবী মহাবীর সিং, বটুকেশ্বর দত্ত গুরুতর অসুস্থ হন।
- গোপন শিক্ষা ও আলোচনা – কারা প্রাচীরের ভেতরেই তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে সংকেত ভাষায় যোগাযোগ রেখে রাজনৈতিক শিক্ষা চালিয়ে গেছেন।

সেলুলার জেলে কাটানো প্রতিটি দিন ছিল একেকটি তপস্যা—যন্ত্রণা সহ্য করে, স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখা।
তাঁদের এই সংগ্রামী মনোবলই আজ ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে গৌরবের অধ্যায়।
সেলুলার জেল আজ একটি জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভ, যেখানে সেই সব কক্ষ, ফাঁসির মঞ্চ, এবং যন্ত্রণা কক্ষ ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ছবি : মৌমিতা দাস ও তীর্থঙ্কর দে